ইয়ামাহা আর ১৫ ( Yamaha R15) নাকি হোন্ডা সিবিআর(Honda CBR) ?
ইয়ামাহা আর ১৫ ( Yamaha R15) নাকি হোন্ডা সিবিআর(Honda CBR) ?
বর্তমান সময়ে সকল মোটরসাইকেল প্রেমীদের কাছে একটা প্রশ্ন শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে এবং সবাই এই একটি ব্যাপারেই অনেক কনফিউশনে আছেন ।
আমরা সকলেই জানি মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মাঝে ইয়ামাহা বাইক এবং আর ওয়ান ফাইভ এই দুটি ব্র্যান্ডই জায়ান্ট মানে দানব বললেই চলে।
আপনি কোন ব্র্যান্ডকেই খারাপ কিংবা আকর্ষণীয় নয় বলতে পারবেন না আর তাই সৃষ্টি হয়েছে সকল সমস্যা।
কারন, একসাথে তো আর আপনি দুই দুটি আকর্ষণীয় বাইক কিনে চালাতে পারবেন না । আর আমাদের দেশের জন্য এই দুটি মোটরসাইকেল তো একদম আকাশের চাঁদ হাতে পাবার মতই একটা ব্যাপার।
এখন এই দুটি মোটরসাইকেল ক্রয়ের ক্ষেত্রে সবাই সবসময়ই দ্বিধাবোধ করে এই ব্যাপারে যে কোন বাইকটা আসলে তিনি কিনবেন নিজের জন্য ।
আপনি কোন দিক ছাড় দেবার সুযোগ পাবেন না মন চাইবে দুটোই কিনে ফেলি । যাই হোক যেহেতু আপনারা বাজেট হাতে নিয়ে বসে আছেন এবং পছন্দ ,স্পেসিফিকেশন ইত্যাদি অনেককিছু বসে বসে দিন রাত ভাবছেন তাদের জন্য আমাদের আজকের আলোচনা ।
এই দুটি বাইক সম্বন্ধেই আমার বেশ ধারণা আছে । আমার ইয়ামাহা এফজেড এস এর বিক্রয়ের পরেই আমি ক্রয় করি ইয়ামাহা এর Yamaha R15 আর তার কিছুদিন পরেই আমার ভাইয়া কিনে ফেলে হোন্ডা এর জায়ান্ট স্পোর্টস বাইক Honda CBR 150R . তো বুঝতেই পারছেন এক ঢিলে আমার দুই পাখিই মরে গেছে।
চলুন তবে আর কথা না বাড়িয়ে দুটি বাইকের বিস্তারিত সকল কিছু নিয়ে আলোচনা করি । আশা করি আমাদের আজকের এই পোস্ট দেখার পর নিশ্চয়ই আপনি বেছে নিতে পারবেন আপনার পছন্দের মোটরসাইকেলটি –
ইয়ামাহা আর ১৫ স্পেসিফিকেশন/রিভিউ/দাম এবং বিস্তারিত
আমার যতটুকু মনে আছে, বাংলাদেশে ২০০৮ সালের দিকে Yamaha R15 বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হয় । প্রথম দিকেই আকর্ষণীয় স্টাইলিশ লুক এর কারণে এবং হেভি স্পোর্টস কোয়ালিটি এর কারণে এটি সবার মন জয় করে নেয় । বিশেষ করে যারা আমাদের মত তরুণ তাঁদের জন্য তো এটা মাইলফলকে পরিণত হয়ে যায়। সত্যি বাংলাদেশের জন্য এটা একটা জায়ান্ট এবং লিজেন্ডারি মোটরসাইকেল।
প্রথমেই এর যেই ভার্সন বাংলাদেশে আসে তা হচ্ছে V1 এর পর ২০১১ সালের দিকে এই জায়ান্ট মোটরসাইকেল এর আরেকটি ভার্সন আসে সেটি হল ভার্সন –টু V-2।
বাংলাদেশে ইয়ামাহা আর১৫ Yamaha R15 এর স্পটলাইট হিসেবে সাফল্য লাভের পর পরই হোন্ডা কোম্পানি তাঁদের আকর্ষণীয় চমক দেখাতে আর অপেক্ষা করে থাকার প্রয়োজন অনুভব না করেই আরেকটি সম্পূর্ণ স্পোর্টস জায়ান্ট হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর Honda CBR 150R বিক্রয়ের জন্য বাংলাদেশে বাজারজাত করণ শুরু করে দিলো।
যদিও ইন্ডিয়াতে ২০১২ সালেই হোন্ডা সিবিআর বিক্রয় শুরু হয়ে যায় কিন্তু আমাদের দেশে এটি আসতে অনেক দেরি করে ফেলে। আমরা মনে হয় ২০১৫ এর দিকে এই জায়ান্ট বাইকটি আমাদের হাতে পাই যা সত্যি অনেক দুঃখজনক ব্যাপার।
জানেন কিনা জানিনা, এই জায়ান্ট বাইকের কিন্তু একটা আকর্ষণীয় ছদ্মনাম আছে যা হল “বেবি-ফায়ার-ব্লেড” আর সিবিআর এর মানে হল- “ ক্রস বিম রেসার”।
অপরদিকে ইয়ামাহা আর ওয়ান ফাইভ Yamaha R-15 সম্পূর্ণ স্টাইলিশ লুক এর মাঝে এর অনেকটাই আরওয়ান এর ধাঁচ রয়েছে যা এর পুর্বের ভার্শন ছিলো। কিছুটা আবার আর-সিক্স এর মত আদলেও রাখা হয়েছে এক কোথায় সব মিলিয়ে নতুন একটা অসাধারণ (বিস্ট লুক Beast look)।
ইয়ামাহা আর ১৫ Yamaha R15- স্পেসিফিকেশন এবং ফিচার এবং আমার অভিজ্ঞতাঃ
- টপ স্পীড ১২৫-১৩৯ কিমি পর্যন্ত পেতে সক্ষম হয়েছে অনেকেই। তবে এটা সম্পুর্ন বাংলাদেশের রাস্তা নির্ভর তথ্য। ইন্ডিয়াতে আমার পরিচিত অনেকেই এর টপ স্পীড পেয়েছে ১৪৮ কিমি এবং থাইল্যান্ডে তার বেশিও অনেকে পেয়েছে।
- ঢাকায় আমি এর মাইলেজ পেয়েছি ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার শহরের ভিতরে এবং হাইওয়েতে ৩৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার । ( ১০ জন আলাদা আলাদা মোটরসাইকেল রাইডার দ্বারা পরীক্ষিত এবং বাইকের ভার্সন Yamaha R15 V2।
- আপনি থাইল্যান্ড এবং অন্যান্য দেশ এর সাথে এর বডি ডিজাইন এবং পার্টস এর খুব বেশি একটা পার্থক্য খুঁজে পাবেন না।
- ফুয়েল ইকোনমিও কিন্তু অনেকটা আপনার বাইকিং স্টাইল এর উপর ডিপেন্ড করে তবে এর ইঞ্জিন অসাধারণ এবং একটা দানবীয় শক্তি আছে।
- এর ইঞ্জিন ১৪৯.৮সিসি লিকুইড কোল্ড ৪ স্ট্রোক ক্ষমতাসম্পন্ন এবং SOHC ফিচার সম্পন্ন।
- ১৬.৮বিএইচপি ৮৫০০আরপিএম টর্ক ক্ষমতা
- ফুয়েল ক্যাপাসিটি ১২ লিটার
- সিক্স স্পীড গিয়ার বক্স
- ডেল্টাবক্স ফ্রেম যা একজন বাইকারকে তার ১৫০ সিসি এর দানবীয় মোটরসাইকেলটিকে কন্ট্রোলে রাখতে সাহায্য করে থাকে।
- ওজন ১৩৬ কেজি।
ইয়ামাহা আর ১৫ Yamaha R15 এর দামঃ
ইয়ামাহা আর ওয়ান ফাইভ এর দাম বাংলাদেশে ৪,৮০,০০০ টাকা (পরিবর্তনীয়)
হোন্ডা সিবিআর ১৫০ Honda CBR150R এর স্পেসিফিকেশন/রিভিউ/ফিচার এবং আমার অভিজ্ঞতাঃ
হোন্ডা সিবিআর১৫০ নিয়ে আর কি বলবো বলুন এর সকল দিয়েই আপনি শুধু নিখুঁত একটা স্পোর্টস বাইকের আদল দেখতে পাবেন।
আকর্ষণীয় লুক এর পাশাপাশি অসাধারণ ব্যাকটেইল । যেখানে দুইজন বসে চালাতে কোন সমস্যাই হয়না।
চলুন এর স্পেসিফিকেশন এবং ফিচার গুলো একবার দেখে নেই তাহলে হয়তো এর সমন্ধে আপনারা আরো ভালো ধারনা পেতে পারেন-
হোন্ডা সিবিআর ১৫০ Honda CBR150R এর স্পেসিফিকেশন/ফিচারঃ
- টপ স্পীড ১৪৮ কিমি যা আমাদের দ্বারা পরীক্ষিত এবং থাইল্যান্ডে অনেকেই ১৫৫+ পেয়েছে এরকম তথ্যও আছে।
- এর মাইলেজ আমি প্রায় ৩২ থেকে ৩৮ লিটার পর্যন্ত পেয়েছি ঢাকার ভেতর এবং হাইওয়েতে ৪২-৪৮কিমি পর্যন্ত । (১০ জন দক্ষ বাইকার দ্বারা আলাদা ভাবে পরীক্ষিত)
- ইঞ্জিন ক্ষমতা ১৪৯.৮ সিসি লিকুইড কোল্ড ৪ স্ট্রোক ইঞ্জিন DOHC ক্ষমতাসম্পন্ন ।
- ম্যাসিভ ১৮.২৬ বিএচপি ১০,৫০০ আরপিএম টর্ক ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন।
- ডায়ামন্ড ট্রাস টেলিস ফ্রেম । যা ভালো তবে ডেল্টা বক্স এর মতোন এতটা ভালো নয় ।
- ফুয়েল ক্যাপাসিটি ১৩ লিটার
- ওজন ১৩৮ কেজি
- বাম্পি শক এবজর্বার
হোন্ডা সিবিআর ১৫০ Honda CBR150R এর দামঃ
বাংলাদেশে হোন্ডা সিবিআর ১৫০ এর দাম পরবে ৪,৪৫,০০০ টাকা। (পরিবর্তনিয়)
চলুন, তবে এবার দুটি বাইক সম্পর্কে সকল রিভিউ এবং অভিজ্ঞতা দেখে নেই হয়তো আপনি এরপর নিজেই বেছে নিতে পারবেন আপনার জন্য মানানসই জায়ান্ট স্পোর্টস মোটরসাইকেলটি।
হোন্ডা সিবিআর ১৫০ Honda CBR150R ইয়ামাহা আরওয়ান ফাইভ Yamaha R-15 রিভিউ এবং অভিজ্ঞতাঃ
দুটি বাইকের মাঝে আপনি পার্থক্য খুঁজতে গেলে হতাশ হবেন হয়তো কারন, দুইটি দুই ব্র্যান্ডের তার উপর তারা বিভিন্ন কিছু ভেবে আপনার আমার জন্যই সবচাইতে ভালো সুবিধা দেবার চেস্টা করেছে এবং আমাদের উচিৎ আমাদের ভালোলাগাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজন কে গুরুত্ব দিয়ে নিজের পছন্দের মোটরসাইকেলটি বেছে নেয়া।
আমার কাছে ইয়ামাহা আর১৫ এর সকল কিছুই ভালো লাগে যদিও এটি হোন্ডা সিবিআর থেকে একটু ছোট হবে দেখতে হয়তো যা আমার কাছে ভালো লাগে আমার স্বাস্থ্য এবং উচ্চতা (৫.৭”) অনুযায়ী মানিয়ে যায় বলে।
যাদের একটু স্বাস্থ্য বেশি মানে স্বাস্থ্যবান তারা হোন্ডা সিবিআর নিতে পারেন কারন এর জায়ান্ট লুক স্বাস্থ্যের সাথে মানিয়ে যেতে সক্ষম। দুইটি বাইকের ফুয়েল ক্যাপাসিটি প্রায় সমান আর১৫ লোড করে ১২ লিঃ আর হোন্ডা সিবিআর ১৩ প্রায় একই কিন্তু।
এবং দুইটি বাইকের কোনটার মাঝেই রিজার্ভ অয়েল সিস্টেম নেই। আর গতির কথা বলবো এটা সম্পূর্ণ আপনার নিজের দক্ষতার উপর নির্ভরশিল আবার এর জন্য নিজের লাইফের ঝুঁকি নিয়ে খুব হাইস্পিডে চালাতে যাবেন না এতে করে আপনার জীবনেরই ক্ষতি হয়ে যেতে পারে ।
দুটি বাইকই সম্পূর্ণ স্পোর্টস বিস্ট গতি সম্পন্ন। তাই এ ব্যাপারে আমার কোন কম্পারিজন নেই। ইঞ্জিন এর কথা বললে বলবো সিবিআর এর মাঝে আছে ডাবল ওভারহেড ইঞ্জিন যা ইয়ামাহা আরওয়ানফাইভ এর সিঙ্গেল ওভারহেড ইঞ্জিন থেকে ভালো।
কিন্তু ইয়ামাহা আর১৫ এর গতি ১৫০ এর সাথে এর ফ্রেম কিন্তু একদম পারফেক্ট ভাবে কন্ট্রোল করা যায় অপরদিকে সিবিআর ১৫০ এর ফ্রেম ডায়ামন্ড ট্রাস এর হবার ফলে আপনি নতুন হলে একটু সতর্কতার সাথেই আপনাকে চালাতে হবে।
টারনিং পয়েন্টের মাঝে পারফর্মেন্স ভালো আপনাকে দিবে অবশ্যই ইয়ামাহা আর১৫ আর স্ট্রেইট লাইন রাস্তার জন্য অবশ্যই সিবিআর ১৫০ পারফেক্ট।
টায়ার এর প্রসঙ্গে আসলে দেখা যায়, রিয়ার টায়ারের সাইজ দুটি বাইকের প্রায় একইরক.১৩০/৭০ সাইজের এবং ফ্রন্টের দিকে সিবিআর এর চাকা একটু বেশি মোটা প্রায় ১০০/৮০ সাইজের।
দাম ও তেমন একটা পার্থক্য নেই আর স্পোর্টস বাইকের ক্ষেত্রে বিশেষ করে এইদুটি জায়ান্টের ক্ষেত্রে আমি মনে করি দাম নিয়ে কোন কথা চলবেনা।
দুটি বাইকের মাঝেই ড্রাই সেল ব্যাটারি আছে যা অনায়াসে ১ থেকে ২ বছর সাপোর্ট দিতে পারে। দুটি বাইকের গিয়ার লিভার একটু ঝামেলার কারন স্পোর্টস বাইক তাই এই দিক দিয়ে দুটি চালাতেই আপনাকে সমান দক্ষ হতে হবে।
সব মিলিয়ে আমার মতে দুটি বাইকই বাংলাদেশের রাস্তা অনুযায়ী পারফেক্ট আমরা যেরকম আকর্ষণীয় স্পোর্টস বাইক চাই ঠিক সেই রকম । তাই আপনি আপনার বাজেট এবং অন্যান্য সকল কিছু ভেবে কিনে নিন আজই আপনার পছন্দের জায়ান্ট স্পোর্টস বিস্ট থেকে যেকোন একটি।
নোটঃ
এসিআই মোটরস হল বাংলাদেশে ইয়ামাহা এর অথরাইজড ডিলার যারা আরওয়ানফাইভ বাজার জাত করে থাকে। এবং উইংস বিডি বাজারজাত করছে হোন্ডা সিবিআর ১৫০।
আপনি হাফসা মার্ট থেকে বাইক দুটি বাইকেরই সম্পূর্ণ ইন্ডিয়ান এবং ইন্দোনেশিয়ান ভার্সন কিনতে পারবেন এবং তারাই একমাত্র অথরাইজড ডিলার।
হাফসা মার্ট এর সাথে যোগাযোগ করতে এই নাম্বারটি ব্যবহার করতে পারেন।
ফোনঃ +880 1757917766)
Reviewed By:
Easha Noor Zaman Roman
ইয়ামাহা বাজারে এনেছে ছয়টি blue কোর মোটর বাইক/ – Product Review BD
২০১৭ সালের নতুন ইয়ামাহা বাইক, ইয়ামাহা এফ জেড এস,এফজেড এফআই (Yamaha FZ S,FZ FI) এখন বাংলাদেশে
ইয়ামাহা মোটর সাইকেল এর দাম ২০১৬ – Product Review BD
ইয়ামাহা মোটর সাইকেল এর দাম
yamaha fazer price in bangladesh 2017
এপাচি আর টি আর
সুজুকি জিক্সার SF এবং বাজাজ পালসার AS 150 তুলনামূলক বিশ্লেষন – BikeBD






Join the discussion