পানি বিশুদ্ধ করার উপায়

পানি বিশুদ্ধ করার উপায়

পানি বিশুদ্ধ করার বিভিন্ন উপায় বা প্রক্রিয়া রয়েছে। তার মধ্যে প্রচলিত প্রক্রিয়া হল reverse osmosis (R.O.)- অভিস্রবণ, distillation- পাতন, ultraviolet- অতিবেগুনী রশ্মি এবং,  ozone-ওজোন। পানিজনিত রোগের একটা মূল কারণ হল পানিতে থাকা জীবানু। খাবার পানিতে আর্সেনিক বা এই ধরণের বিষাক্ত বস্তুর কারণে যত মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ খুব দ্রুত জীবানুজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে এমনকি মারা যেতে পারে। অতীতে পানিজনিত রোগে (কলেরা, ডায়রিয়া) গ্রামের পর গ্রাম মানুষ মরে সাফ হয়ে যেত। তাই পানির বিশুদ্ধকরন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। বর্তমানে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং সরবরাহ ব্যবস্থার কারণে এই ধরণের মহামারিগুলো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবে বন্যা বা অন্য প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময়ে জরুরী ভিত্তিতে স্থানীয়ভাবে পানি বিশুদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই আলোচনায় পানি বিশুদ্ধকরনন করার বিভিন্ন উপায় নিয়ে কিছুটা বিশ্লেষন ও বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

চুল পড়া রোধে ২০টি ঘরোয়া প্রতিরোধ ও টিপস -প্রথম পর্ব

আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিঃ

পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানি থেকে জীবানু দুর করার জন্য অতিবেগুনি বিকিরণ (ultra violet radiation) খুবই কার্যকরী একটা পদ্ধতি। যে কোনো ধরণের ব্যাকটেরিয়া, সিস্ট এবং স্পোর মারতে এই অতিবেগুনি রশ্মী অত্যন্ত শক্তিশালী একটা অস্ত্র; তবে ঘোলা পানিতে কিংবা পানিতে নাইট্রেট, সালফেট বা ফেরাস (আয়রন) আয়ন একে কাজ করতে বাধা দেয়। এছাড়া অতিবেগুনি রশ্মী পানির বেশি গভীরে প্রবেশ করতে পারে না, তাই পানিকে অগভীর ধারায় প্রবাহিত করতে হয় (সর্বোচ্চ ৩০ সেমি বা ১ ফুট)। পানিকে তাৎক্ষনিক ভাবে জীবানুমুক্ত করলেও পরবর্তীতে সেই পানি সরবরাহ লাইনে/পাইপে অন্য কোন জীবানু উৎস থেকে দুষিত হলে সেটা ঠেকানো যায় না; এছাড়া এটার খরচও বেশি। তাই এই পদ্ধতির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজে সীমাবদ্ধ। তবে জেনে রাখতে ক্ষতি নাই, হয়তো কখনো কোনো পরিস্থিতিতে কাজে লেগে যেতে পারে।

 সৌর পদ্ধতিঃ

দুষিত পানিকে সূর্যালোকে রেখে দিলে সেখানকার ডায়রিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া অকার্যকর হয়ে যায়। ধারণা করা হয় রোগবাহী জীবানুগুলো সূর্যালোকের প্রভাবে দুর হওয়ার পেছনে তিনটি কারন কাজ করে: ক) অতিবেগুনি-এ রশ্মীর কারণে ব্যাকটেরিয়ার বিপাক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয় এবং কোষ কাঠামো ধ্বংস হয়। খ) ৩২০-৪০০ মিমি তরঙ্গদৈর্ঘের অতিবেগুনি রশ্মী পানিতে দ্রবীভুত অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে এবং অক্সিজেনের অত্যন্ত সক্রিয় রূপ উৎপাদন করে (ফ্রী রেডিক্যাল, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড); এগুলোও রোগজীবানুগুলোর দফারফা করে দেয় বলে ধারণা করা হয়, এবং গ) সৌরশক্তি সঞ্চয়ে পানির তাপমাত্রা বেড়ে যায়, ৫০°সে. এর অধিক তাপমাত্রায় এই জীবানুনাশী প্রক্রিয়াগুলো তিনগুন দ্রুততর হয়।

সহজেই দূর করুন মুখের বয়সের ছাপ ও দাগ ভিটামিন-সি এর সাহায্যে

 পানি পরিচ্ছন্ন রাখা যতটা সহজ, পানি বিশুদ্ধ করা ততটা সহজ নয়।

নানা রকম ময়লা ও রোগ জীবাণু মিশে পানিকে দূষিত করে। তাছাড়া পানিতে ভাসমান ময়লা, বিষাক্ত গ্যাস ও রোগজীবাণু সম্পুর্ণভাবে অপসারণ করা না গেলে বিশুদ্ধ করা সম্ভব নয়। যেভাবে পানি বিশুদ্ধ করতে হবে প্রক্রিয়াগুলো দেওয়া হলঃ

ফুটানো:

ফুটিয়ে পানি বিশুদ্ধ করা যায়। উচ্চতাপে ১০/২০ মিনিট পানি ভালোভাবে ফুটাতে হবে। ফলে পানিতে থাকা রোগজীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়, ধাতব লবণ থিতিয়ে পড়ে ও দ্রবীভূত গ্যাস বের হয়ে যায়। পানির সর্বোচ্চ বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য ফুটানোর পরে ফিল্টার ব্যবহার করতে হবে। ফিল্টার যদি না থাকে তাহলে পানি পান করার আগে কয়েক স্তর পুর বিশিষ্ট ছাঁকনি দিয়ে তা ছেঁকে নিতে হবে।

 ছাঁকন পদ্ধতি:

এই পদ্ধতিতে দরকার গকে চারটি কলস বা মাটির চারি। চারি হচ্ছে মাটির তৈরি বড় বোল বা গামলা। চারটি কলস বা চারি উপর নিচ করে সাজাতে হয়। প্রথমে কলসে সাধারণ পানি দেওয়া হয়। দ্বিতীয় কলসে বালু ও তৃতীয় কলসে নুড়ি পাথর রাখতে হয়। বালি ও নুড়ি পাথরে পানি পরিশোধিত হয়ে চতুর্থ কলসে পড়ে। সাধারণত গ্রামাঞ্চলে এই পদ্ধতিতে পানি বিশুদ্ধ করা হয়।

 পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট:

নানা রকম ট্যাবলেট ব্যবহার করে পানি বিশুদ্ধ করা যায়। এর মধ্যে হ্যালোজেন অতি পরিচিত ট্যাবলেট। প্রতি তিন লিটার পানিতে একটি ট্যাবলেট গুলিয়ে রেখে দিলে এক ঘণ্টা পর তা থেকে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়।

প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বক উজ্জ্বল করার উপায়

পটাশ:

২৪ লিটার পানিতে এক গ্রাম পটাশ মিশিয়ে ছয় ঘণ্টা রেখে দিলে সেই পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়।

ফিটকিরি:

সামান্য পরিমাণ ফিটকিরি পানিতে মিশিয়ে ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করে তা থেকে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে পাত্রের উপর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হবে ও তলানি ফেলে দিতে হবে।

আয়োডিন:

প্রতি লিটার পানিতে দুই শতাংশ আয়োডিনের দ্রবণ মিশিয়ে এত ঘণ্টা রেখে পানি বিশুদ্ধ করা যায়। শহরে যে ট্যাপের পানি পাওয়া যায় তা মূলত ব্লিচিং ও ক্লোরিন দিয়ে পরিশোধিত করা হয়। যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চুল পড়া ও ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী। এছাড়াও যে হাঁড়িতে পানি ফুটানো হয় তার তলায় অনেক সমর শক্ত আস্তরণ পড়তে দেখা যায় এটি ক্লোরিন ও ব্লিচিংয়ের জন্য হয়ে থাকে।

শারমিন বলেন, “এই পদ্ধতিতে পরিশোধিত পানি ত্বক ও চুলের জন্য ক্ষতিকার হলেও শহরাঞ্চলের জন্য পানি বিশুদ্ধ করার অন্য কোনো সহজ উপায় নেই। তাই বলবো এই পানি ভালো ভাবে ফুটিয়ে ও ছেঁকে পান করার উচিত।”

পানি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, “যদি প্রাকৃতিক পানি সরাসরি সংরক্ষণ করতে হয় তবে যতটা সম্ভব সুর্যের আলো থেকে দূরে রাখতে হবে।”

শ্যাম্পু করার নিয়ম: শ্যাম্পু করার সময় কোন ভুল হচ্ছে না তো!

 বৃষ্টির পানি:

যেসব অঞ্চলে পানি সহজলভ্য নয় সেখানে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি জমা করে রাখা হয়। এক্ষেত্রে বৃষ্টি শুরু হওয়ার ১০ মিনিট পর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হবে। পরিষ্কার পাত্রে পানি সংগ্রহ করা উচিত। এই পানি বেশি দিন সংরক্ষণের জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুর্যের আলো থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। পরে ব্যবহারের আগে তা ভালো মতো ছেঁকে ব্যবহার করা যাবে।

আর “ফুটানো পানির ক্ষেত্রে তা ভালো ভাবে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে মাটির পাত্রে বা কলসে সংরক্ষণ করলে অনেকদিন পর্যন্ত তা ভালো থাকে। প্লাস্টিকে পানি রাখলে তার নিচে তলানি জমে ও পান করার অযোগ্য হয়ে যায়।” বললেন শারমিন সুলতানা।

অনেক ব্যস্ততার ভিড়ে পানি বিশুদ্ধতার দিকে আলাদাভাবে নজর দেওয়া হয় না তাই তিনি বিসিএসআইআর’য়ের উদ্ভাবিত রাসায়নিক পদার্থভিত্তিক ফিল্টার যা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে স্বীকৃত এমন ফিল্টার ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

এছাড়াও বাজারে নানা রকমের টাইমার যুক্ত পানি পরিশোধক যন্ত্র পাওয়া যায় তা ব্যবহারের মাধ্যমেও বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায় এটি নিরাপদ ও ঝামেলা মুক্ত।যে কোনো উৎস থেকে পানি সংগ্রহের পর তা বিশুদ্ধকরণের বর্তমানে ফিল্টারের ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। শহর কিংবা গ্রাম, নগর কিংবা বন্দরের প্রায় প্রতিটি ঘরেই নানা রকম ওয়াটার ফিল্টারের ব্যবহার করা হচ্ছে।

মার্কেটে ঘুরে দেখা গেছে, পানি বিশুদ্ধ করার জন্য অনেক রকমের ফিল্টার পাওয়া যায়। এদের দাম ১৫শ টাকা থেকে ২২ হাজার টাকার মধ্যে। তবে দামের ভিত্তিতে এর কার্যকারিতা নির্ভর করে বলে জানালেন বিক্রেতারা। জেনে নিন, বিভিন্ন রকম পানির ফিল্টারের বাজারমূল্য। রাজধানীর ইলেকট্রনিক্স পণ্যের অন্যতম বাজার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মার্কেটে আমদানিকৃত বিভিন্ন ওয়াটার ফিল্টারে ভরে আছে বিউটি কর্নার।

একস্তর বিশিষ্ট ওয়াটার ফিল্টারের দাম ১৫শ টাকা। এর মাধ্যমে দুর্গন্ধ ও আয়রনমুক্ত করা যাবে। বাসার পানির লাইনের সাথে সরাসরি লাগিয়ে এটা ব্যবহার করা যাবে। তিনস্তর বিশিষ্ট ওয়াটার ফিল্টারের দাম ৩ হাজার ৫শ টাকা। এর মধ্যে একটিতে রয়েছে পিপি, নেট এবং কার্বনের স্তর। তবে দুইমাস পর পিপি পাল্টাতে হবে। দাম পরবে ১০০ টাকা। এছাড়া নেট ও কার্বন পাল্টাতে হবে ৬ মাস পর পর। দাম পড়বে ২০০ টাকা।

৫ স্তর বিশিষ্ট ওয়াটার ফিল্টারের দাম পড়বে ৫ হাজার টাকা। একই প্রক্রিয়াতে ২ ও ৬ মাস পর পর পাল্টাতে হবে পিপি, নেট ও কার্বন। এছাড়া ৫ স্তর বিশিষ্ট ইউবি ওয়াটার ফিল্টারের দাম পড়বে ৯ হাজার টাকা। এটি বৈদ্যুতিক ওয়াটার ফিল্টার। পানিকে ব্যাক্টেরিয়ামুক্ত করতে পারে এ ফিল্টারটি।

 

তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পানি পানে সাধারণ মানুষকে অভ্যস্থ করার সুচিন্তিত কর্মসূচি থাকা উচিত। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনকেও এগিয়ে আসা উচিত।

 

আরও টিপস দেখুনঃ

 

Join the discussion

74 thoughts on “পানি বিশুদ্ধ করার উপায়

  1. I must voice my admiration for your kind-heartedness giving support to men who really want help with your question. Your very own dedication to getting the message up and down had been incredibly practical and have in most cases helped women just like me to arrive at their endeavors. Your personal informative instruction signifies a lot to me and further more to my mates. Thanks a ton; from all of us.

  2. Thank you for the sensible critique. Me and my neighbor were just preparing to do a little research about this. We got a grab a book from our local library but I think I learned more clear from this post. I’m very glad to see such wonderful information being shared freely out there.

  3. An impressive share, I just given this onto a colleague who was doing a little analysis on this. And he in fact bought me breakfast because I found it for him.. smile. So let me reword that: Thnx for the treat! But yeah Thnkx for spending the time to discuss this, I feel strongly about it and love reading more on this topic. If possible, as you become expertise, would you mind updating your blog with more details? It is highly helpful for me. Big thumb up for this blog post!

  4. You actually make it seem so easy with your presentation but I find this topic to be really something that I think I would never understand. It seems too complex and extremely broad for me. I am looking forward for your next post, I will try to get the hang of it!

  5. The very root of your writing whilst appearing agreeable originally, did not sit perfectly with me personally after some time. Somewhere within the paragraphs you actually managed to make me a believer but only for a while. I nevertheless have a problem with your leaps in assumptions and one might do nicely to help fill in those gaps. When you can accomplish that, I will certainly be impressed.

  6. Good V I should definitely pronounce, impressed with your site. I had no trouble navigating through all tabs as well as related info ended up being truly simple to do to access. I recently found what I hoped for before you know it in the least. Quite unusual. Is likely to appreciate it for those who add forums or something, web site theme . a tones way for your customer to communicate. Excellent task..

  7. Undeniably believe that which you stated. Your favorite justification seemed to be on the internet the simplest thing to be aware of. I say to you, I definitely get annoyed while people think about worries that they just do not know about. You managed to hit the nail upon the top and defined out the whole thing without having side effect , people could take a signal. Will likely be back to get more. Thanks

  8. Virtually all of whatever you state happens to be supprisingly appropriate and that makes me ponder why I had not looked at this in this light previously. Your piece truly did switch the light on for me as far as this specific subject matter goes. However there is one particular position I am not really too cozy with so whilst I make an effort to reconcile that with the main theme of the point, let me see just what all the rest of your subscribers have to say.Very well done.

  9. An impressive share, I just given this onto a colleague who was doing a little analysis on this. And he in fact bought me breakfast because I found it for him.. smile. So let me reword that: Thnx for the treat! But yeah Thnkx for spending the time to discuss this, I feel strongly about it and love reading more on this topic. If possible, as you become expertise, would you mind updating your blog with more details? It is highly helpful for me. Big thumb up for this blog post!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।